দাম্পত্য জীবন ও সহবাস ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সহবাস সফলতায় সংসার সুখের হয়ে ওঠে। অনেক দম্পতি সহবাসের পর আলিঙ্গনে আদর সোহাগ করে। অনেকেই গোসল সেরে নেন, আবার কেউ কেউ তৎক্ষণাৎ ঘুমিয়ে পড়েন।
কিন্তু এই প্রতিবেদনের আলোচ্য বিষয় হলো- সহবাসের পর প্রস্রাবের প্রয়োজন আছে কিনা। অধিকাংশ নারীই সহবাসের পর প্রস্রাব সেরে আসেন। প্রশ্ন হলো- এটা কি আসলেই জরুরি? সহবাসের পর প্রস্রাব না করলে ভ্যাজাইনার স্বাস্থ্যে কেমন প্রভাব পড়বে? আসুন এই বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে নেয়া যাক।

* সহবাসের পর প্রস্রাব করলে মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধ হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূত্রনালির ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সহবাসের পর প্রস্রাব করে নেয়া ভালো। নিউ ইয়র্কের গাইনিকোলজিস্ট আলিসা ডোয়েক বলেন, ‘নারীর ভ্যাজাইনার পাশেই মূত্রনালির অবস্থান এবং উভয়ের দূরত্ব খুবই কম। ভ্যাজাইনাতে প্রচুর ব্যাকটেরিয়া থাকে। সহবাসকালে এসব ব্যাকটেরিয়া সহজেই মূত্রনালিতে চলে আসতে পারে।’

ভ্যাজাইনাতে পেনিসের প্রবেশে (পেনিট্রেশন) নারীর মূত্রনালিতে চাপ পড়তে পারে এবং এর ফলে মূত্রনালির ব্যাকটেরিয়া মূত্রাশয়ের দিকে চলে আসতে বাধ্য হয়- যা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ডা. ডোয়েকের মতে, সহবাস পরবর্তী প্রস্রাব একটি ভালো অভ্যাস হতে পারে। এই সহজ প্রচেষ্টা সংক্রমণ এড়াতে সাহায্য করবে।

মূত্রনালিতে সংক্রমণের অস্বস্তিকর উপসর্গসমূহ হলো- প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া বা ব্যথা, ঘনঘন প্রস্রাবের চাপ, ঘোলাটে প্রস্রাব ও প্রস্রাব ঝরে পড়া।

সহবাস পরবর্তী প্রস্রাবে অভ্যস্ত হলে মূত্রনালির সংক্রমণ নিশ্চিতভাবেই এড়ানো যাবে- এমনটা অবশ্য বলছেন না বিশেষজ্ঞরা। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে প্রস্রাব করলেই সুরক্ষা এমনটা নাও হতে পারে। আপনার পুনরাবৃত্তিমূলক মূত্রনালি সংক্রমণ থাকলে অথবা সহবাস পরবর্তী প্রস্রাবেও সংক্রমণের প্রবণতা না কমলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলা উচিত।

হানিমুনে বা বিয়ের প্রথমদিকে দম্পতিরা প্রচুর সহবাসে লিপ্ত হয়। এসময় মূত্রনালিতে সংক্রমণ বা হানিমুন সিস্টাইটিসের ঝুঁকি বেশি। হানিমুন সিস্টাইটিস হলো মূত্রাশয়ের প্রদাহ। ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন/মূত্রনালির সংক্রমণ থেকে সিস্টাইটিস হতে পারে। যেসব নারী প্রথম প্রথম বা দীর্ঘসময় পর সহবাস করেন তাদের সিস্টাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

* সহবাস পর প্রস্রাব করলে গর্ভধারণ এড়ানো যায়?
অনেকেই মনে করেন, সহবাসের পর প্রস্রাব করলে গর্ভধারণ এড়ানো যায়। এ প্রসঙ্গে ডা. ডোয়েক বলেন, ‘সহবাসের পর প্রস্রাব সেরে নিলে গর্ভধারণ হয় না- এটা ১০০ শতাংশ ভুল ধারণা। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।’ ডা. ডোয়েক আরো বলেন, ‘মূত্রনালি দিয়ে প্রস্রাবই বের হয়, শুক্রাণু নয়। মূলত সহবাসের সময় ভ্যাজাইনাতে শুক্রাণুর স্খলন ঘটে থাকে এবং সবকিছু ঠিক থাকলে গর্ভাবস্থার সৃষ্টি হয়।’ উভয়েই সম্পূর্ণ পৃথক সিস্টেম। তাই প্রস্রাব করলে অভ্যন্তরীণ ভ্যাজাইনার শুক্রাণু দূর হয় না।

* সহবাস পর প্রস্রাব করলে যৌনবাহিত রোগ প্রতিরোধ হয়?
সহবাসের পর প্রস্রাব করলে যৌনবাহিত রোগ এড়িয়ে যাওয়া যায়- এটা একটি ভুল ধারণা। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি যৌনবাহিত রোগ এড়ানোর সমাধান নয়। যৌনবাহিত রোগের আশঙ্কা করলে সহবাসের সময় সুরক্ষার প্রমাণিত উপায় অবলম্বন করতে পারেন, যেমন- কনডম পরে নিতে পারেন। নিয়মিত টেস্ট করতে পারেন। তবে মূত্রনালিতে সংক্রমণের প্রবণতা কমাতে সহবাস পরবর্তী প্রস্রাবে অভ্যস্ত হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

তথ্যসূত্র: দ্য হেলদি